এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
• তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ ব্যাখ্যা করতে পারব :
• যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব;
• ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুযোগ ব্যাখ্যা করতে পারব;
• সরকারি কার্যক্রমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের পুরুত্ব বর্ণনা করতে পারব
• চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবদান ব্যাখ্যা করতে পারব
• গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব ।
১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে পুরো চট্টগ্রাম বন্দর কেঁপে উঠেছিল। সেই রাতে মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডোদের একটি দল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সতর্ক পাহারা ফাঁকি দিয়ে বন্দরের অসংখ্য জাহাজে মাইন লাগিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। জাহাজগুলো ডুবে বন্দরে ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই তখন দেশি বিদেশি কোনো জাহাজই আর আসতে পারছিল না। মুক্তিযুদ্ধের এটি ছিল অনেক বীরত্বপূর্ণ একটি অভিযান।
কিন্তু ভোমরা কি জানো, নৌ কমান্ডোর এই দুঃসাহসিক দলটিকে সে অভিযানের দিনক্ষণটি কেমন করে জানানো হয়েছিল? তাদের সাথে যেহেতু যোগাযোগের কোনো উপায়ই ছিল না, তাই মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধে আকাশবাণী রেডিও থেকে ১৩ ই আগস্ট বেজে উঠে বিখ্যাত গায়ক পক্ষঞ্চল মল্লিকের গাওয়া একটি গান “আমি তোমার যত শুনিয়েছিলাম গান”! সেই গানটি ছিল একটি সংকেত, সেটি শুনে নৌ কমান্ডোরা বুঝতে পেরেছিল তাদের এখন আঘাত হানার সময় এসেছে।
এতদিন পরে তোমাদের কাছে এ ঘটনাটি নিশ্চয়ই অবিশ্বাস্য মনে হয়। এখন আমরা কত সহজেই না একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। আর আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা শুধু যোগাযোগ করার জন্য কতই না কষ্ট করেছিলেন।
যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়- একমুখী ও দ্বিমুখী। যখন একজন ব্যক্তি বা একটি প্রতিষ্ঠান অনেকের সাথে যোগাযোগ করে সে পদ্ধতিটি হলো “একমুখী”, ইংরেজিতে যাকে বলে *ব্রডকাস্ট”। রেডিও টেলিভিশন তার সবচেয়ে সহজ উদাহরণ- যেখানে রেডিও বা টিভি স্টেশন থেকে সবার জন্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। যাদের জন্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়, তারা কিন্তু পাল্টা যোগাযোগ করতে পারে না। কোনো কোনো লাইভ অনুষ্ঠানে দর্শক বা শ্রোতাদের অবশ্য ফোন করে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয়- যেখানে লক্ষ লক্ষ শ্রোতাদের মধ্যে দু-একজন যোগাযোগ করতে পারে, কাজেই এটি আসলে একমুখী ব্রডকাস্টই থেকে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির যুগান্তকারী উন্নয়নের জন্য আজকাল রেডিও বা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানেও একটা বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। টেলিভিশনের দু-একটি চ্যানেলের পরিবর্তে এখন শত শত চ্যানেল দেখা সম্ব। বাংলাদেশে বসেই একজন সারা পৃথিবীর অনেক টেলিভিশন চ্যানেল দেখতে পারে। শুধু যে আমরা অসংখ্য চ্যানেল দেখতে পারি তা নয়- সারা পৃথিবীর যে কোন প্রাপ্তে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো কিছুক্ষণের মধ্যে চ্যানেলগুলো দেখাতে পারে।
ব্রডকাস্ট পদ্ধতির যোগাযোগের আরও উদাহরণ হচ্ছে খবরের কাগজ এবং ম্যাগাজিন। তোমরা কি জানো যতই দিন যাচ্ছে ততই অনলাইন পত্রিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা লেখার জন্যে শুধু যে কম্পিউটার লাগে তা নয়, স্মার্ট মোবাইল ফোনেও দেখা সম্ভব।
যোগাযোগের একমুখী ব্রডকাস্ট পদ্ধতির সম্পূরক রূপটি হচ্ছে দ্বিমুখী যোগাযোগ। যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে টেলিফোন। ঘোষরা সবাই জানো যে, টেলিফোনে দুজন একই সাথে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। মাত্র একযুগ আগেও বাংলাদেশে শুধু সচ্ছল ও ক্ষমতাবান মানুষদের কাছে টেলিফোন ছিল। এখন এদেশে যেকোনো মানুষ মোবাইল ফোনে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং এটি সম্প হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য।
বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী দেশের বাইরে থেকে কাজ করে আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। এখন তাদের আত্মীয়ফজন ইচ্ছে করলেই তাদের সাথে যোগাযোগ করে কথা শুনতে পারে কিংবা দেখতে পারে। আর এখন এ কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে।
একসময় মানুষের নামটিই ছিল পরিচয়। এখন নামের পাশাপাশি আরেকটি পরিচয় খুব গুরত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে, সেটি হচ্ছে তার ই-মেইল এড্রেস। কয়েকটি অক্ষর ও বিশেষ চিহ্ন দিয়ে একটি ই-মেইল এড্রেস তৈরি হয় এবং এটি দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো মানুষ যোগাযোগ করতে পারে। তোমরা নিশ্চয়ই এতদিনে জেনে গেছ পৃথিবীর মানুষের ভেতর এখন যোগাযোগের বেশির ভাগই হয়ে থাকে ই-মেইলে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম একটি বিষয় হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আজ সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একজন একই সময়ে অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, সংগঠিত হতে পারে- এমনকি সংঘটিত হয়ে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে।
কাজেই তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ তথ্যপ্রযুক্তি সারা পৃথিবীর সকল মানুষের ভেতর যোগাযোগটা বাড়িয়ে দিয়ে একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম দিতে শুরু করেছে- যেখানে ভারচুয়াল (Virtual) জগতে সবাই সবার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
দলগত কাজ : সত্যিকারের খবরের কাগজ এবং অনলাইন খবরের কাগজের পক্ষে দুটি দল তৈরি করে একটি বিতর্কের আয়োজন কর।
নতুন শিখলাম : একমুখী ব্রডকাস্ট, দ্বিমুখী যোগাযোগ, ই-মেইল এড্রেস, সামাজিক নেটওয়ার্ক, ভারচুয়াল জগৎ।
জীবনের অন্য সকল ক্ষেত্রের মতো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটির প্রয়োগ ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তনের সূচনা করেছে। যেকোনো ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য থাকে কম সময়ে এবং কম খরচে পণ্য বা সেবা উৎপাদন করা এবং দ্রুততম সময়ে তা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়া। পণ্যের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ব্যবস্থাপনা, তাদের দক্ষতার মান উন্নয়ন, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, বিপণন এবং সবশেষে পণ্য বা সেবার বিনিময় মূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইসিটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
সাধারণভাবে আইসিটি প্রয়োগের ফলে ব্যবসায় নানাবিধ সুবিধা অর্জিত হয়। এছাড়া আইসিটি খরচ কমাতে সাহায্য করে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কম সময়ে অধিক কাজ করা যায়। ফলে ব্যবসার খরচ হ্রাস পায় । এতে ব্যবসায়ী একদিকে কম খরচে তার পণ্য বিক্রয় করতে পারে, অন্যদিকে মুনাফাও বাড়াতে পারে। খরচ কমানোর অনেকগুলো উপায় রয়েছে।
(১) মজুদ নিয়ন্ত্রণ : ব্যবসার একটি বড় খরচ হলো পণ্যের মজুদ। বাজার চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে মজুদ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বিশেষায়িত সফটওয়্যার কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মজুদের হালনাগাদ তথ্য জানা যায় । ফলে সেই অনুযায়ী উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায়।
(২) উৎপাদন ব্যবস্থাপনা : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎপাদন ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি করা সম্ভব। উৎপাদন স্বয়ংক্রিয়করণসহ আইসিটি নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হলে কম সময়ে অধিক উৎপাদন করা যায়। তখন উৎপাদন খরচ হ্রাস পায়। তাছাড়া কর্মী ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ উৎপাদনে গতিশীলতা আনতে সক্ষম হয়।
(৩) উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা : মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইটসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রধান প্রধান উপকরণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুত কার্যকরী করে তুলেছে।
> মোবাইল ফোন: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। ফলে চলতে ফিরতে কিংবা ঘরে বসেও ব্যবসা যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। মোবাইল ফোনের কনফারেন্স সুবিধার মাধ্যমে একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা যায় এমনকি ছবিও দেখা যায় ৷ ফলে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা যায়৷
> ফ্যাক্স : ফ্যাক্সের মাধ্যমে জরুরি লিখিত তথ্য ও ছবি তাৎক্ষণিকভাবে প্রেরণ করা যায়। যে সব দেশে ব্যবসার লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেতা বা বিক্রেতার স্বাক্ষরের প্রয়োজন, সেখানে ফ্যাক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
> ইমেইল : ই-মেইল ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে লিখিত যোগাযোগ করা যায়। এমনকি পণ্যের ছবি ক্রেতার কাছে পাঠানো যায়। পণ্য সম্পর্কে অন্য কোনো ক্রেতার মূল্যায়ন যদি ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়ে থাকে, তাহলে সেটির লিংকও পাঠানো যায়।
> ইন্টারনেট : ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্যসেবার খবর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
> ইন্ট্রানেট অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দক্ষর ভৌগলিকভাবে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে সংস্থাপিত ইন্টানেট ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করছে।
(৪) সঠিক হিসাব রাখা : ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সঠিক হিসাব সংরক্ষণ করা। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সাধারণ স্প্রেডশিট ব্যবহার করেই তাদের ব্যবসার হিসাব সংরক্ষণ করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ডেটাবেস সফটওয়্যার ব্যবহার করে পণ্যের মজুদ, কর্মীদের তথ্যাবলি, এমনকি গ্রাহকদের তথ্যাবলিও সংরক্ষণ করা যায়। এই তথ্যাদির কৌশলী প্রয়োগ ভবিষ্যতে ব্যবসার উন্নতিতে ব্যবহার করা যায়।
(৫) বিপণন : ব্যবসা করতে হলে পণ্য বা সেবার বিপশন ও প্রচারে আইসিটি প্রয়োগের ফলে নতুন মাত্রা যোগ করা সম্ভব হয়েছে।
> বাজার বিশ্লেষণ : যেকোনো নতুন পণ্য বা সেবা বাজারে চালু করার পূর্বে এ বিষয়ে বর্তমান বাচ্ছার সম্পর্ক জানা প্রয়োজন। আইসিটির মাধ্যমে নতুন পণ্যের চাহিদা, যোগান ও দামের সম্পর্ক দ্রুততার সঙ্গে বিশ্লেষণ করা যায়।
> প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে তথ্য সব প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে সহজে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
সরবরাহ : জিপিএস বা অনুরূপ ব্যবস্থাদির মাধ্যমে কম খরচে পণ্য সরবরাহের পরিকল্পনা করা যায়।
> প্রচার: শুয়বেসাইট, ব্লগ কিংবা সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে এবং কখনো কখনো বিনামূল্যে পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়।
(ঙ) বিক্রয় ব্যবস্থাপসা ও হিসাব : ইলেক্ট্রনিক পয়েন্ট অব সেল (EPOS) হলো এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে বিক্রয়ের সকল তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। এতে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের সুযোগ থাকে।
(৭) মূল্য সংক্ষত্র : আইসিটি প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায়ীগণ তাদের পণ্যের মূল্য সরাসরি নিজের ব্যাংক হিসাবে সংগ্রহ করতে পারে। ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিক্রেতা তার পণ্য বা সেবার মূল্য কেতার হিসাব থেকে সরাসরি নিজের হিসাবে স্থানান্তর করতে পারে।
উপর্যুক্ত উপায়গুলো ছাড়াও আইসিটির প্রয়োগ নানাভাবে ব্যবসাকে সহায়তা করে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের কাজ শুরু করার ক্ষেত্রেও আইসিটি ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
দলগত কাজ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবসায় ভবিষ্যতে আর কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনবে বলে তোমাদের মনে হয়। দলে বসে একটি তালিকা তৈরি কর ও উপস্থাপন কর।
নতুন শিখলাম : কর্মী ব্যবস্থাপনা, লিংক, বিপণন, ব্লগ, ইলেক্ট্রনিক পরেন্ট অব সেল (EPOS)
রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অ হলো সরকার। যেকোনো দেশের সরকার জনগণের জন্য নিরাপদ, সৃজনশীল কর্মসংস্থান এবং সর্বোপরি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার জন্য নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। সরকারের সাধারণ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে আইন ও নীতি প্রণয়ন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজ দেশকে সঠিকভাবে উপস্থাপন। এই সকল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য সরকার দেশের মধ্যে কর ও শুল্ক আদার, বিদেশ থেকে অনুদান ও ঋণের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন করে। প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারি সকল কাজেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ রয়েছে। এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো।
(ক) সরকারি তথ্যাদি প্রকাশ : ইন্টারনেটের বিকাশের আগে সরকারি বিভিন্ন তথ্য যেমন নিয়োগ বি দরপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন প্রকার আদেশ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নোটিশ বোর্ড এবং কখনো কখনো বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতো। ফলে সর্বসাধারণের পক্ষে সরকারের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা কিংবা নিয়মকানুন জানা সম্পন্ন হতো না। বর্তমানে ওয়েবসাইট বা পোর্টালের মাধ্যমে এই সকল তথ্য সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। উল্লেখ্য বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ওয়েব পোর্টাল ঠিকানা হলো www.bangladesh.gov.bd।
(খ) আইন ও নীতিমালা প্রণরণ ও সংশোধন : বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের নীতিমালা, আইন ইত্যাদি প্রণয়ন এবং সংশোধন এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বর্তমানে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জনগণের মতামত গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া কল সেন্টারের মাধ্যমে জনগণের যে অংশ ই-মেইলে অভ্যস্থ নয়, তাদের মতামতও নেওয়া যায়।
(গ) বিশেষ বিশেষ দিবস বা ঘটনা সম্পর্কে প্রচার : সরকার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জনগণের এক বিরাট অংশকে সরাসরি কোনো বার্তা পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ১২ কোটি লোকের কাছে মোবাইল ফোন রয়েছে। সরকারি কোনো পুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তার Short Message Service (SMS) বা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে সরাসরি ঐ সকল ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।
(খ) পোরগোড়ার সরকারি সেবা : সরকারি কর্মকাণ্ডে আইসিটির সবচেয়ে উদ্ভবনী ও কুশলী প্রয়োগ হলো জনগণের কাছে নাগরিক সেবা পৌঁছে দেওয়া। মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে নাগরিক সেবাসমূহ সরাসরি নাগরিকের দোরগোড়ার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়া যায়। উন্নত দেশগুলোতে এর মাধ্যমে জনগণ ঘরে বসেই পাসপোর্ট প্রাি আয়কর প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, সরকারি কোষাগারে অর্থপ্রদান প্রভৃতি কাজ নিমিষেই সম্পন্ন করতে পারে। আমাদের দেশেও বর্তমানে অনেক নাগরিক সেবা খুব সহজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
> ই-পর্চা : জমি-জমার বিভিন্ন রেকর্ড সংগ্রহের জন্য পূর্বে অনেক হয়রানি হতো, বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ই-সেবা কেন্দ্র থেকে তা সহজে সংগ্রহ করা যায়। এজন্য অনলাইনে আবেদন করে আবেদনকারী জমি-জমা সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিল এর সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে জনগণ খুব সহজে সেবা পাচ্ছেন। অন্যদিকে সেবা প্রদানের সময় তথ্যাদি ডিজিটালকৃত হয়ে যাচ্ছে ফলে ভবিষ্যতে তথ্য প্রাপ্তির পথ সহজ হচ্ছে।
> ই-বুক : সকল পাঠ্যপুস্তক অনলাইনে সহজে প্রাপ্তির জন্য সরকারিভাবে একটি ই-বুক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে (www.ebook.gov.bd)। এতে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ও সহায়ক পুস্তক রয়েছে।
> ই-পুর্জি : চিনিকলের পুর্জি (ইক্ষু সরবরাহের অনুমতিপত্র) স্বয়ংক্রিয়করণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে মোবাইল ফোনে কৃষকরা তাদের পুর্জি পাচ্ছে। ফলে এ সংক্রান্ত হয়রানির অবসান হওয়ার পাশাপাশি কৃষকও তাদের ইক্ষু সরবরাহ উন্নত করতে পেরেছেন।
> পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ : বর্তমানে দেশের সকল পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে।
> ই-স্বাস্থ্যসেবা : জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশের অনেক স্থানে টেলিমিডিসিন সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালসমূহের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মোবাইল ফোনে বা এসএমএসে অভিযোগ পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।
> অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকরণ : ঘরে বসেই এখন আয়করদাতারা তাদের আয়করের হিসাব করতে পারেন এবং রিটার্ন তৈরি ও দাখিল করতে পারেন।
> টাকা স্থানান্তর : পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম ইত্যাদির মাধ্যমে বর্তমানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণ সহজ ও দ্রুত হয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেট ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজে টাকা স্থানান্তরিত করা যায়।
> পরিসেবার বিল পরিশোধ : নাগরিক সুবিধার একটি বড় অংশ হলো বিদ্যুৎ, পানি কিংবা গ্যাস সরবরাহ। এ সকল পরিসেবার বিল পরিশোধ করতে পূর্বে গ্রাহকের অনেক ভোগান্তি হতো। বর্তমানে অনলাইনে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এ সকল বিল পরিশোধ করা যায়।
> অনলাইন রেজিস্ট্রেশন : সরকারি কর্মকাণ্ডে আইসিটি প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারি সেবার মান উন্নয়নের উদাহরণ হিসাবে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির স্বয়ংক্রিয়করণের একটি উদাহরণ দেওয়া হলো।
ব্যবসার উদ্দেশ্যে যখন কোনো কোম্পানি বা ফার্ম গঠন করা হয়, তখন সেটিকে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত হতে হয়। বাংলাদেশে নিবন্ধনের এরকম একটি প্রতিষ্ঠান হলো রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিস এন্ড ফার্মস। ভোর না হতে সেখানে লাইন, তিল ধারণের জায়গা নেই, গ্রাহকের ভিড়, বিভিন্ন ধরনের দালালদের অত্যাচার ইত্যাদি ছিল এই প্রতিষ্ঠানের একসময়কার চিত্র। আইসিটির প্রয়োগের ফলে বর্তমান সেখানকার চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এন্ড ফার্মসের ওয়েবসাইট (www.roc.gov.bd) থেকেই এখন অনেক কাজ সম্পন্ন করা যার। কয়েকটি কাজের অতীত ও বর্তমান অবস্থা ছক আকারে দেখানো হলো :
কাজ | অতীত | বর্তমান |
নামের ছাড়পত্র | কমপক্ষে ৭ দিন | ৩০ মিনিট |
নিবক্ষন | কমপক্ষে ৩০ দিন | ৪ দিন |
ফি প্রদান | তোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে | ব্যাংকের মাধ্যে |
নিবানের জন্য অফিসে বাতারাত | কমপক্ষে স্থরবার | একবারও নয়। |
দলগত কাজ : সরকারের আরো অনেক কর্মকাণ্ডে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্ররোগ দেখা বার। তোমার এলাকার এরকম কার্যাবলির একটি তালিকা তোমার বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করো।
তথ্যপ্রযুক্তির কারণে যেসব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে তার একটি হচ্ছে চিকিৎসা। একটা সময় ছিল যখন ডাক্তার বা কবিরাজরা রোগীর লক্ষণ দেখে যেটুকু তথ্য পেতেন, সেটা দিয়েই তার চিকিৎসা করতেন। এখন আর সে অবস্থা নেই, একজন রোগী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডাক্তার তার পুরো শরীরকে সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন এবং অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তার রোপ নির্ণয় করতে পারেন। শুধু তাই নয়, সেই তথ্যগুলো ডেটাবেসে থাকতে পারে এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সকল তথ্য আবার খুঁজে বের করে নিয়ে আসা যেতে পারে। একজন রোগীর চিকিৎসা করার জন্য ডাক্তারদের আর অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয় না। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সঠিক ঔষধ নির্বাচন ও প্রেসক্রিপশন প্রস্তুত করতে পারে।
শুধু যে তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে রোগীর সকল তথ্য পর্যালোচনা করা সম্ভব হয় তা নয়, চিকিৎসাতে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। এ যন্ত্রগুলো বে সকল তথ্য সংগ্রহ করে, সেগুলো প্রক্রিয়া করা হয় নিখুঁতভাবে, যে কাজটি আগে করা অসম্ভব ছিল, এখন সেটি মানুষ নিজের ঘরে বসে করতে পারে।
আমাদের দেশে এখনো ডাক্টারের সংখ্যা বেশি নয়। এ অপ্রতুলতার কারণে অনেক সমরেই দেখা যায় ছোট শহরে বা গ্রামে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের পাওয়া যায় না। ভবিষ্যতে একসময় দেশের সব অঞ্চলেই চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে, কিন্তু যতদিন আমরা সে অবস্থায় পৌঁছাতে পারছি না তথ্যপ্রযুক্তি ততদিন আমাদেরকে সাহায্য করতে এসেছে “টেলিমেডিসিন” নিয়ে। টেলিমেডিসিন হচ্ছে টেলিফোনের সাহায্যে চিকিৎসা সেবা নেওয়া- তোমরা শুনে খুশি হবে আমাদের দেশেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান “টেলিমেডিসিন সাহায্য " নিয়ে এসেছে। যখন হাতের কাছে কোনো ডাক্তারকে জরুরি কিছু জিজ্ঞেস করার উপায় নেই, তখন টেলিমেডিসিন ব্যবহার করে ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া যায়।
রোগ হলে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে আমরা যেভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিই- ঠিক তার মতোই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগ বেন না হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ। সে জন্য সবাইকে রোগ প্রতিরোধক টিকা নিতে হয় তোমরা জেনে পর্ব বোধ করতে পার বে, শিশুদের রোগ প্রতিরোধক টিকা দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে শিশুকে মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। দেশের কোটি কোটি শিশুকে সঠিক সময়ে এই টিকা দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন সব হয়, কারণ তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে দায়িত্বপ্রান্ত ব্যক্তিগণ নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা করতে পারছেন এবং সেটাকে কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা আগে যে বিষয়গুলো কল্পনাও করতে পারতাম না, এখন সেরকম অনেক কিছু আমাদের হাতের নাগালে চলে এসেছে।
মনে করো না যে আমরা সবকিছুই পেয়ে গেছি। তথ্যপ্রযুক্তির কারণে আমরা এখন অন্য মাত্রার গবেষণা করতে পারি। মানুষের জিনোম রহস্যভেদের মত জটিল কাজ আধুনিক কম্পিউটার দ্বারা সহজেই সমাধান করা গেছে। তাই চিকিৎসার জগতে একটা বিপ্লব শুরু হতে যাচ্ছে। এতদিন রোগের উপসর্গ কমানো হতো- এখন সত্যিকারভাবে রোগের কারণটিই খুঁজে বের করে সেটাকে অপসারণ করা হবে। শুধু তাই নয়- এখন যে রকম সব মানুষ একই ওষুধ খায়- ভবিষ্যতে প্রত্যেক মানুষের জন্য আলাদা করে তার শরীরের উপযোগী ওষুধ তৈরি হবে। এখন একজনকে উপস্থিত থেকে অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন করতে হয়। ভবিষ্যতে হাজার মাইল দূরে থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্জনরা রোগীর অপারেশন করতে পারবেন। বড় হয়ে তোমরা নিশ্চয়ই চিকিৎসার এই নতুন জগতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
দলগত কাজ : চিকিৎসার কাজে ব্যবহার হয় এরকম নানা ধরনের যন্ত্রপাতির একটা তালিকা কর এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে কোনগুলো কাজ করে সেগুলো চিহ্নিত কর।
নতুন শিখলাম : ডাটাবেস, টেলিমেডিসিন, জিনোম।
সভ্যতা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যা সব হচ্ছে মানুষের নতুন কিছু বের করার আগ্রহ ও গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে। তোমরা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পেরেছ তথ্যপ্রযুক্তির কারণে এই পবেষণার জগতে শুধু যে একটা বিশাল উন্নতি হয়েছে তা নয়- বলা যেতে পারে এখানে সম্পূর্ণ নতুন একটা মাত্রা যোগ হয়েছে। মানুষ এখন সাহিত্য, শিল্প বা সমাজবিজ্ঞান অথবা গণিত, প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান, যা নিয়েই গবেষণা করুক না কেন ভারা কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া সেই গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারে না।
গবেষণা করতে হলেই নানা ধরনের তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয়। তথ্য সংগ্রহ করতে হয়, প্রক্রিয়া করতে হয়, বিশ্লেষণ করতে হয় এবং গবেষণা শেষে তথ্যকে সুন্দর করে প্রদর্শন করতে হয়। আগে সব সময় এই কাজগুলো মানুষকে দৈহিক পরিশ্রম করে করতে হতো, কম্পিউটার চলে আসার পর এগুলো আর নিজের হাতে করতে হয় না। মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করে করতে পারে। এর ফলে এখন গবেষকদের আর তথ্যপ্রক্রিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না, তারা সত্যিকারের গবেষণায় মন দিতে পারেন। তোমরা জেনে খুশি হবে শিল্প- সাহিত্য, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি এরকম সব বিষয়েই এদেশের গবেষকরা অনেক চমৎকার গবেষণা করে থাকেন এবং তারা সবাই তাদের গবেষণায় কম্পিউটার ব্যবহার করেন।
বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি বিষয়ের গবেষণাতেও কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই গবেষণাগুলোকে প্রধান দুই ভাগে ভাগ করা যায়, সেগুলো হচ্ছে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক। তাত্ত্বিক গবেষণাতে গবেষকরা একটা বিষয়ের তাত্ত্বিক অংশটুকু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন- এবং সেজন্যে তাদেরকে কম্পিউটারের উপর নির্ভর করতে হয়। গবেষণার কাজটুকু ঠিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে কি না সেটা দেখার জন্যে তাদেরকে তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখতে হয় এবং এ জন্যে বিশাল ডেটাবেস বা তথ্য ভান্ডারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়, তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হয়।
ল্যাবরেটরিতে ব্যবহারিক গবেষণা করতে হয়, নানা রকম যন্ত্র ব্যবহার করে সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ল্যাবরেটরির নতুন নতুন যন্ত্রপাতি তৈরি করা বা পরিচালনা করা কিংবা ব্যবহার করার জন্য বিজ্ঞানীরা সব সময় কম্পিউটারকে ব্যবহার করেন। মোটামুটি অবধারিতভাবে বলে দেওয়া যায়, একটি যন্ত্র থেকে তথ্য নিয়ে সেটা প্রক্রিয়া করার জন্য সবসময়ই কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
কম্পিউটার বলতেই আমাদের চোখের সামনে যে ছবিটি ভেসে উঠে, আজকাল তার চাইতে অনেক ছোট কম্পিউটার তৈরি হয়েছে কম্পিউটারের মতো কাজ করতে পারে সেরকম ছোট ছোট মাইক্রো কন্ট্রোলার, FPGA (Field Programmable Gate Array), PLA ( Programmable Logic Array) ইত্যাদি তৈরি হয়েছে। যন্ত্রের ভিতর সেগুলো বসিয়ে দিয়ে যন্ত্রগুলোকে অনেক স্বয়ংক্রিয় করে গবেষণার পুরো কাজটি অনেক সহজ করে দেওয়া হয়। ব্যবহারিক গবেষণাতে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যায় বলে বিজ্ঞানের অনেক গবেষণাতে আজকাল বিজ্ঞানীদের আর ল্যাবরেটরিতে বসে থাকতে হয় না, তারা অনেক দূর থেকে পরীক্ষাটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এ পদ্ধতিটি Virtual Laboratory এর আওতায় পড়ে সেখানে সত্যিকার ল্যাবরেটরির ন্যায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব। www.softpedia.com এ ধরনের Virtual Laboratory এর উদাহরণ। পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য যে শুধু প্রচলিত কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় তা নয়- অনেক সময় বিজ্ঞানীরা আরো শক্তিশালী বিশেষায়িত কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন।
দলগত কাজ : তোমার নখের সমান দশটি কম্পিউটার তোমাকে দেওয়া হলে তুমি সেগুলো কী কাজে লাগাবে? লেখ।
নতুন শিখলাম : মাইক্রোকন্ট্রোলার, FPGA, PLA
নীলিমাদের বাড়িতে আজ ঈদের দিনের মতো আনন্দ। কারণ অনেক দিন পর ঢাকা থেকে নীলিমার বড় ভাই বাড়িতে আসবে। নীলিমা ও হুমায়ূন তাদের বাবা-মার দুই সন্তান। ওদের বাড়ি বাংলাদেশের উত্তরের জেলাগুলোর অন্যতম কুড়িগ্রাম জেলার ভূরঙ্গামারি উপজেলার সদর থেকে একটু এগোলেই গুদের ৰাড়ি। ওদের বাবা জয়নাল মিয়া মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে চাকরি করেন। নীলিমা এ বছর অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছে। ইতিপূর্বে সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষাতে বৃত্তি পেয়েছিল। তাই ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে গ্রামের সবাই নীলিমাকে পছন্দ করে। নীলিমার ভাই হুমায়ূনও ভালো শিক্ষার্থী। যে বছর হুমায়ুন ঢাকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হয়, সে বছর ওদের উপজেলা থেকে সেই একমাত্র শিক্ষার্থী ছিল যে বুয়েটে পড়ার সুযোগ পায়। হুমায়ূন এখন ঢাকার একটি বেসরকারি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করে। বাড়িতে নীলিমা ও নীলিমার মায়ের সঙ্গে ওদের দাদা ও দাদি থাকেন।
হুমায়ূন আসবে জেনে হুমায়ূনের বাবা গতকালই মধ্যপ্রাচ্য থেকে নীলিমার মায়ের মোবাইল ফোনে টাকা পাঠিয়েছেন। কাল দুপুরেই মা বাজারে গিয়ে টাকা নিয়ে এসেছেন আর সঙ্গে অনেক বাজার। আজ সকাল থেকে মা আর দাদি মিলে রান্না করছে। নীলিমার দাদা পত্রিকায় পড়েছেন যে বিসিএস পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে হুমায়ূন যদি বাড়ি আসে তাহলে সে কীভাবে উদ্ভ পরীক্ষার জন্য দরখাস্ত করবে, বিষয়টি নিয়ে তিনি চিন্তিত হলেন।
সকাল থেকে দাদা নীলিমাকে শুনিয়েছে কেমন করে তিনি নিজের চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছিলেন। হেঁটে হেঁটে নদীর ঘাটে যাওয়া, সেখান থেকে নৌকা করে আর পায়ে হেঁটে কুড়িগ্রাম শহরে যাওয়া, সেখানে দরখাস্ত টাইপ করা, তারপর সেটি পাঠানো। কত কাজ।
অবশ্য দাদার উৎকণ্ঠা দেখে নীলিমা তেমন ভয় পাচ্ছে না। গত রাতে সে ভাইয়ার কাছ থেকে জেনেছে, তাদের বাড়িতে বসেই ভাইয়া ঐ আবেদন করতে পারবে। নীলিমা অবশ্য তার দাদাকে এ কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে যে তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষার ফলাফল আনার জন্য দাদাকে কুড়িগ্রাম শহরে যেতে হয়নি। মার মোবাইল ফোনেই পরীক্ষার ফলাফল জেনেছিল।
বাড়িতে ঢুকে হুমায়ূন প্রথমেই তার দাদাকে আশ্বস্ত করল যে তার ল্যাপটপ আর মডেমের সাহায্যে ইন্টারনেটে প্রবেশের মাধ্যমে সে বাড়িতে বসেই আবেদনটি করতে পারবে। শুধু তাই নয়, তার ঢাকা ফিরে যাওয়ার ট্রেনের টিকেট কিনতেও কাউকে আর স্টেশনে গিরে লাইনে দাঁড়াতে হবে না।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর হুমায়ূন তার ল্যাপটপের সঙ্গে মডেমটি লাগিয়ে নিল। তারপর আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করল। এবার সবাইকে নিয়ে চলে গেল এক নতুন দুনিয়ায়, যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কেমন করে পৃথিবীকে নানাভাবে বদলে দিচ্ছে।
দলগত কাজ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব উল্লেখ করে আকর্ষণীয়ভাবে একটি পোস্টার ডিজাইন কর। |
---|
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশের ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন সূচি হয়েছে। শুরুর দিকে ধারণা করা হতো স্বয়ংক্রিয়করণ এবং প্রযুক্তির প্রয়োগের ফলে বিশ্বব্যাপী কাজের পরিমাণ কমে যাবে এবং বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ফলে কিছু কিছু সনাতনী কাজ বিলুপ্ত হয়েছে বা বেশ কিছু কাজের ধারা পরিবর্তন হয়েছে বটে, তবে অসংখ্য নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেট সংযোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগও দ্রুতহারে বেড়ে গেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগের ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে যা বাঙালি শিক্ষাবিদ ও বর্তমানে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক ড. ইকবাল কাদির এর মতে- সংযুক্তিই উৎপাদনশীলতা (Connectivity is Productivity) অর্থাৎ প্রযুক্তিতে জনগণের সংযুক্তি বাড়লে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ে। ফলে তৈরি হয় নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে একজন কর্মী অনেক বেশি দক্ষ হয়ে ওঠে। ফলে, অনেক প্রতিষ্ঠানই স্বল্প কর্মী দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে -
• বিভিন্ন কারখানার বিপজ্জনক কাজগুলো মানুষের পরিবর্তে রোবট কিংবা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যেতে পারে ।
• কর্মস্থলে কর্মীদের উপস্থিতির সময়কাল, তাদের বেতন-ভাতাদি ইত্যাদি হিসাব করার জন্য বেশ কিছু কর্মীর প্রয়োজন হয়। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় উপস্থিতি যন্ত্র, বেতন-ভাতাদি হিসাবের সফটওয়্যার ইত্যাদির ব্যবহারের মাধ্যমে এ সকল কাজ সম্পন্ন করা যায়।
• বিভিন্ন গুদামে মালামাল সুসজ্জিত করার কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায় ।
• টেলিফোন এক্সচেঞ্জে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল ব্যবস্থার কারণে পৃথক জনবলের প্রয়োজন হয় না।
• স্বয়ংক্রিয় ইন্টারেকটিভ ভয়েস প্রযুক্তি ব্যবহার করে দিন-রাত যেকোনো সময় গ্রাহকের নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাব দেওয়া যায় ।
• ব্যাংকের এটিএম এর মাধ্যমে যেকোনো সময় নগদ অর্থ তোলা যায় ।
অন্যদিকে আইসিটির কারণে অনেক কাজের ধরন প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে -
• পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য নিজেকে ক্রমাগত দক্ষ করে তুলতে হয়। ফলে দক্ষতা উন্নয়নের কর্মসূচিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।
• কম্পিউটারের সাহায্যে অনেক ধরনের কাজ ঘরে বসেই করা সম্ভব হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পূর্বে বিশেষ দক্ষতা না থাকলে যে কাজ সম্পন্ন করা যেত না, এরূপ অনেক কাজ কম্পিউটারের সহায়তায় সহজে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। যেমন ফটোগ্রাফি বা ভিডিও এডিটিং।
• অনেকে ঘরে বসে কাজ করছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন ভার্চুয়াল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানে সহায়ক কর্মীর সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি তাদের কাজের ধরনও পাল্টে গেছে ।
• স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হওয়াতে কর্মীদের কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে, ইত্যাদি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় প্রণোদনা হলো এর মাধ্যমে নিত্যনতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়। ফলে অনেক বেশি কাজের সুযোগ তৈরি হয়।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বিস্তার ও নতুন কর্মসৃজন
জাতীয় রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ছাড়াও কেবল মোবাইল ফোনের বিকাশের ফলে বাংলাদেশে অনেক সেক্টরে বিপুল পরিমাণ নতুন কর্মের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো - (ক) মোবাইল কোম্পানিতে কাজের সুযোগ : দেশের সকল মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে বিপুলসংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। একটি মোবাইল কোম্পানি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানি । (খ) মোবাইল ফোনসেট বিক্রয়, বিপণন ও রক্ষণাবেক্ষণ : দেশের প্রায় ১২ কোটি মোবাইল গ্রাহককে মোবাইল ফোন সেট সরবরাহ, সেগুলোর বিপণন, বিক্রয় এবং পরবর্তীকালে বিক্রয়োত্তর সেবার জন্য বিপুল পরিমাণ কর্মীর চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। (গ) বিভিন্ন মোবাইল সেবা প্রদান : মোবাইল ফোনে বিল পরিশোধের জন্য দেশে প্রতিনিয়ত বিল পরিশোধ কেন্দ্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সকল কেন্দ্রে যেকোনো মোবাইল গ্রাহক তার মোবাইলের বিল পরিশোধসহ অন্যান্য মোবাইল সেবা গ্রহণ করতে পারে। (ঘ) নতুন খাতের সৃষ্টি : মোবাইলে প্রযুক্তি বিস্তারের ফলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো অসংখ্য নতুন খাতের সৃষ্টি হয়েছে, যার মাধ্যমে অনেক নতুন কর্মপ্রত্যাশীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। |
শুধু কর্মসৃজন নয়, কর্মপ্রত্যাশীদের কাজের সুযোগ প্রাপ্তিতেও ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে। পূর্বে যেকোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নোটিশ বোর্ড, বড় বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে সেঁটে দেওয়া হতো। এছাড়া বড় বড় কোম্পানি বা সরকারি কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হতো। আইসিটি বিকাশের ফলে বর্তমানে ইন্টারনেটে ‘জবসাইট” নামে নতুন এক ধরনের সেবা চালু হয়েছে। এই সকল জবসাইটে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সরাসরি তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে পারে । শুধু তাই নয়, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের ওয়েবসাইট কিংবা ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইটেও বিনামূল্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে। ফলে, কর্মপ্রত্যাশীদের একটি বিরাট অংশ বিষয়টি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে অবগত হতে পারেন। এছাড়া এরূপ কোনো কোনো সাইটে কর্মপ্রত্যাশীগণ নিজেদের নিবন্ধিত করে রাখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে, যেকোনো নতুন কাজের খবর প্রকাশিত হওয়ামাত্রই নিবন্ধিত ব্যক্তি ই-মেইল বা এসএমএস-এর মাধ্যমে এ সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন।
ঘরে বসে আয়ের সুযোগ
ইন্টারনেটের বিকাশের ফলে বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য ঘরে বসে অন্য দেশের কাজ করে দেওয়ায় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের অনেক কাজ, যেমন - ওয়েবসাইট উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, মাসিক বেতন ভাতার বিল প্রস্তুতকরণ, ওয়েবসাইটে তথ্য যুক্তকরন, সফটওয়্যার উন্নয়ন ইত্যাদি অন্য দেশের কর্মীর মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকে। এটিকে বলা হয় আউটসোর্সিং (Outsourcing)। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে যে কেউ এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে । এক্ষেত্রে কাজের দক্ষতার পাশাপাশি ভাষা দক্ষতাও সমানভাবে প্রয়োজন হয়। এই সকল কাজ ইন্টারনেটে অনেক সাইটে পাওয়া যায়। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হলো আপওয়ার্ক (www.upwork.com), ফ্রিল্যান্সার (www.freelancer.com), ইল্যান্স (www.elance.com) ইত্যাদি। বাংলাদেশের মুক্ত পেশাজীবীগণ এই সকল সাইট ব্যবহার করে আত্মকর্মসংস্থানে সক্ষম হচ্ছে। আউটসোসিং-এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।